বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সততা ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে সুনাম অর্জন করে চলেছেন। বিভিন্ন সময়ে দেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জীবনবাজি রেখে কাজের স্বাক্ষর রাখছেন। এর স্বীকৃতিও পাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি বহির্বিশ্ব থেকেও আসছে তাদের সফলতার প্রশংসা। এর ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম-২০২১’ শীর্ষক ঐ প্রতিবেদনে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার সন্ত্রসবাদ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ওপর জোর দিয়েছেন। অনলাইন মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো কিছু অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সেগুলো জোরালোভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারও করেছে।
‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের গ্রেফতার বা আটকের জন্য সরকার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করেছে। উগ্রবাদীদের প্রচার, অর্থায়ন প্রতিরোধ করতে এবং অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রুখতে ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) প্রণয়ন করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ), অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। অন্যান্য কাউন্টার টেরোরিজম সম্পর্কিত ইউনিটগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ডস, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি, এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।
এছাড়া মার্কিন সরকার মেট্রোপলিটন পুলিশ সাইবার, সোয়াত এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে প্রশিক্ষণ, অ্যান্টি টেরোরিজম ট্রাইব্যুনালের (এটিটি) বিচারক এবং প্রসিকিউটরদের তদন্ত পরিচালনা, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে মামলার বিচার পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থল ও সামুদ্রিক সীমান্তে টহল দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এবং আধুনিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনছে। এর বাইরে বিমানবন্দরে কার্গো ও যাত্রীদের পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক যন্ত্রাংশ ও লোকবল বাড়ানো হয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশে তিনটি উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে এবং এগুলো প্রতিরোধ করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে একটি ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা একটি মার্কিন রিমোট-কন্ট্রোলড রোবট দিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করার কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া সিটিটিসি ২০২১ সালে ৪০টি তদন্ত করেছে এবং ৮৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রাম পুলিশ ৪০টি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। অ্যান্টি টোরোরিজম ইউনিট তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং ধারণা করা হয় তারা প্রায় ৭৫টি মামলার তদন্ত করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ঐ সময়ে ১০ জন সন্ত্রাসীকে সুপথে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে সিটিটিসি এবং তাদের প্রত্যেককে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাদরাসা কারিকুলামে আধুনিকায়ন করেছে সরকার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে কাজ করছে পুলিশ।