মিজানুর রহমান মিন্টু, সাধারন সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক লীগ, পল্লবী থানা শাখা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। যার হাত ধরে ৫২‘র ভাষা আন্দোলন, ৬৬‘র ছয় দফা, ৬৮‘র স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০‘র স্বাধারন নির্বাচন এবং ৭১‘র মহান মুক্তিযুদ্ধের মত আন্দোলন সংগ্রামগুলো সফলভাবে সংগঠিত করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ডটির ঠাঁই করে দিয়েছে।
অথচ গুটিকয়েক কুচক্রী, ক্ষমতালোভী, স্বার্থান্বেষী মহল এ সংগঠনটিকে ধ্বংসের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বারবার ষড়যন্ত্র করে আসছে। পুঙ্খানুপুঙ্খু বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশ ও দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ যখনই পরিপূর্ণভাবে এ সংগঠনটি পেয়েছে তখনই এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ভাবমূর্তি উত্তরোত্তর শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে টানা তিন বার ক্ষমতায় থাকার সুযোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন রাজনৈতিক দলের হয়নি। নেতৃত্বের সততা, সাহসী মনোভাব এবং দেশ ও জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের সুপরিকল্পিত রাষ্ট্র পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান সরকার যে নজির বিহীন সফলতা দেখিয়েছে তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু এত সফলতার পরও কিছু দলীয় নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং সরকারের সফলতাগুলি সঠিকভাবে প্রচারের অভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান করে দিচ্ছে।
কোন রাজনৈতিক সংগঠন দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে ঐ সংগঠনের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের মধ্যে কিছুটা ক্ষমতার দম্ভ ও ব্যক্তি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এই ক্ষীন মন-মানসিকতা যখন কোন নেতার মাঝে বিরাজ করে তখন দলীয় সুনাম ও স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির লক্ষ্যে নানান কৌশলে সেই নেতা অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় দলীয় কর্মকান্ডের মধ্যে গ্রুপিং, একে অপরের ব্যক্তিগত ও চলমান রাজনৈতিক জীবনের ভুলক্রুটি ধরার প্রতিযোগিতা, দলের মধ্যে হাইব্রিডদের প্রশ্রয় দেয়া সহ নানা ধরণের রাজনৈতিক অনিয়ম।
কখনো কখনো ঐ নেতা ভুলেই যায় তার এহেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তার নিজের অজান্তেই তার দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। বিগত ১৩ বছরে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল সূচকে যে নজির বিহীন সফলতা দেখিয়েছে তা প্রতিবেশী অনেক উন্নত রাষ্ট্রকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে এ সরকারের ভোট ব্যাংক বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা সময় ছিল যখন দলের মধ্যে চেইন অব কমান্ডিং নিয়ম নীতির বেশ চর্চা ছিল।
তখন সকল ইউনিটের নেতারা ওয়ার্ডের নেতার নেতৃত্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, ওয়ার্ডের নেতারা থানার নেতার নেতৃত্ব পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিল আর থানা ছিল মহানগর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অথচ এ সভ্য রাজনীতির চর্চা এখন আর নেই! এখন একজন ইউনিটের নেতাও একটি পদের আশায় নগর ও কেন্দ্রীয় নেতার সান্নিধ্যে অল্পতেই ঘনিষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে ওয়ার্ড ও থানার নেতাদের নেতৃত্বের সফলতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ছে।
আওয়ামীলীগের মত একটি বিশাল সংগঠনে প্রতিটি আসনেই ৪-৫ জন যোগ্য এমপি প্রার্থী ও ওয়ার্ড ভিত্তিক ৮/১০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। অথচ ঐ সকল প্রার্থী যখন তার প্রার্থীতার অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভাইলীগ পরিবেশ সৃষ্টি করে, সংগঠনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতেও দ্বিধা করে না তখন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঐ সংগঠনের সকল শ্রেনীর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আমি ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের একজন নিবেদিত কর্মী। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে স্বল্প পরিসরে নেতৃত্বের জায়গা থেকে কাজ করে আসছি। অথচ ঢাকা-১৬ আসনের শান্ত রাজনৈতিক পরিবেশকে কিছু কিছু নেতা বিতর্কিত করার এমনভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে আমরা যারা তৃণমূলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারা যেন বিরোধী দলের আন্দোলনরত কর্মী।
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ না টানলেই নয়। সদ্য ঢাকা -১৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পল্লবী ও রূপনগর থানার ইউনিট সমূহের সম্মেলন এক সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন অনুষ্ঠানের ষ্টেজ ব্যানারে নামফলকে দেখা যায় পল্লবী ও রূপনগর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের চার জনের মধ্যে দুই জন এবং ছয়টি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ১২ জন সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের শুধুমাত্র ৩ জন নেতা স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
তাহলে এ সম্মেলন কতটা কর্মী বান্ধব ও স্বতঃফুর্ত হয়েছে এটা অবশ্যই প্রশ্নের দাবীদার। আবার একটা হাস্যকর বিষয়ও দেখলাম এই সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ২জন সুবিধাবাদী নেতা যাদের মুখে বিগত ১২ বছর অন্তত ২০ হাজার বার তাদের বক্তব্যে যে নেতাকে আকাশচুম্বী সম্মানের জায়গায় স্থান দিয়েছে আজ তারাই ঐ নেতাকে ছোট করে কথা বলছে। এ যেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার মীর জাফর আলী খানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমার কথাগুলি কাউকে হেয় বা ছোট করার জন্য নয় শুধুমাত্র ঐ সকল সুবিধাবাদী নেতাদের অনুরোধ করে বলছি যাদের জন্য আজ দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তারা যেন নিজেরা তাদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় এবং দলীয় স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থকে পরিহার করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কৃতিত্বে নিজেকে একজন অংশীদার হিসেবে দাবী করতে পারেন সেই চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটায়। সেই সাথে ২০২৩ সালে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে পুনরায় ৪র্থ বারের মত ক্ষমতায় আসীন করা যায় সেই লক্ষ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।