প্যারা শিক্ষিকা (প্রক্সি) হিসেবে কোমলমতি শিশুদের পড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন এক তরুণী। নিয়মিত পাঠদানে মনোযোগীও ছিলেন। চেয়েছিলেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চা দোকানি স্বামীর পাশে থেকে দরিদ্র পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা ঘোঁচাতে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার সৌন্দর্য।
লোলুপ দৃষ্টি পড়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির এক কর্তার। এরপরেই শুরু হয় যৌন নিপীড়ন। সম্মানের ভয়ে বেশ কিছুদিন সহ্য করছিলেন তিনি। তবে তারও কিছুদিন পর জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে মরিয়া হয়ে উঠেন ওই প্রভাবশালী। ফলে বাধ্য হয়েই আইনের দারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী তরুণী।
এমনই অভিযোগ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পক্ষিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যারা শিক্ষিকা কান্তার (ছদ্দ নাম)। দীর্ঘদিন যাবত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি সম্পদশালী বশির মৃধার নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, এ ঘটনা অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারকে জানালে ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে মুখ বন্ধ রাখতে শারীরিক নির্যাতন চালান বশিরের স্বজনরা। যার চিহ্ন শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।
কান্তা জানান, স্কুলে যোগদানের কিছুদিন পরেই কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন বশির। মাঝে মধ্যে মুখরোচক খাবার কিনে দিতেন এই সহ-সভাপতি। এছাড়া তরুণীর মোবাইল না থাকায় তাকে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোনও দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এতে সায় দেননি। পরে দিনে-রাতে বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন বশির এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তার স্বামী কুয়াকাটায় একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করেন। আর বাড়িতে তার শাশুড়ি শ্রবণ শক্তিহীন। এই সুযোগে ৫ ফেব্রুয়ারি তার শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করে রাতে টয়লেটে লুকিয়ে থাকেন বশির। পরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে তাকে জাপটে ধরেন এবং স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে নিপীড়ন চালান। পরে চিৎকার দিলে দৌঁড়ে পালিয়ে যান বশির। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যৌনহয়রানি করতে থাকেন বশির।
স্থানীয় গৃহবধূ পারভীন বেগম জানান, মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই উৎপাত শুরু করেন সহ-সভাপতি বশির। এটা এলাকার সবাই জানেন।
অপর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বয়াতী জানান, বিগত দিনেও এমন ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন। তার উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।
পরী নামের এক গৃহবধূ জানান, কিছুদিন পূর্বে রাস্তার মধ্যে কান্তাকে শ্লীতাহানির চেষ্টা চালান বশির। পরে দৌঁড়ে গিয়ে মেয়েটি আমার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এদিকে ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, স্ত্রীর মুখে এমন সব ন্যাক্কারজনক কথা শুনে থানায় অভিযোগ করেছি। এরপর বাড়ি থেকে ভয়ে বাইরে যেতে পারছি না। বশির মৃধার লোকজন এরমধ্যে দুইবার হামলা চালিয়েছে। নজর রাখে, আমাকে পেলে আর রক্ষা নেই। এখন এক ধরনের বন্দিদশায় রয়েছি। এমনকি মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, কিছুদিন আগে পাশের উপজেলা আমতলীর এক নারীকে নিয়ে এক ঘটনায় বালীয়াতলী ইউপি কার্যালয়ে সালিশ-বৈঠকে বিচার শেষে বশিরকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে বশিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি, পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।