17.4 C
Los Angeles
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৩০, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪

সাবেক মন্ত্রী মৌলভী শামস উদ্দিন এর ৫১ তম মৃত্যুবার্ষিকী

জাতীয়সাবেক মন্ত্রী মৌলভী শামস উদ্দিন এর ৫১ তম মৃত্যুবার্ষিকী
খবরটি শেয়ার করুন

মরহুম মৌলভী শামস উদ্দিন আহমেদ অবিভক্ত বাংলার (কুষ্টিয়া) প্রাক্তন মন্ত্রী গত। ৩১শে অক্টোবর তার ৫১ তম শাহাদাৎ দিবস হয়ে গেল। ১৯৬৯ সালের ৩১শে অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন।

তিনি বাংলার রাজ ২৪ ডটকম এর সম্পাদক শাহাজাদা শামস ইবনে শফিক এর দাদা। তিনি ছিলেন  বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, স্বাধিনতা সংগ্রামের নির্ভিক যোদ্ধা, নিষ্ঠাবান, নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ সমাজ সেবী মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ ১৮৮৯ ইং সালে আগষ্ট মাসে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় কয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত সুলতানপুর গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি দেশবাসীর কাছে মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ নামে এক কালে বিশিষ্টপরিচিতি ছিলেন।

১৯১০ ইং সালে তিনি হুগলী কলিজিয়েট স্কুল হইতে এন্ট্রান্স পাশ করিবার পর কলিকাতা প্রেসিডেন্ট কলেজ হতে ১৯১৪ সালে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। অতঃপর ১৯১৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ইতিহাসে এম.এ এবং বিএল  ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯১৭ ইং সালে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জেলা আদালতে এবং ১৯১৯ সালে কলিকাতা হাইকোর্টে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের জুনিইয়ার হিসবে আইন ব্যাবসা শুরু করেন।প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৯)সময় হইতেই ভারতীয় উপমহাদেশে খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে দেশের আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।তরুন আইনজীবী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেব এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। এই সময়ে পাক ভারত বাংলাদেশ উপমহাদেশে ইংরেজদের প্রবর্তিত জমিদার প্রথা উচ্ছেদের জন্য যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন মৌলভী শামস আহমেদ সাহেব। তিনি ছিলেন তদানীন্তন বাংলার আকুতোভয় বৃটিশ বিরোধী “খেলাফত” আন্দোলনের সংগঠক।১৯১৮ সালে সারা ভারতবর্ষে বিরোধী “খিলাফত” আন্দোলন আরম্ভ হয়। এই আন্দোলনের ভিত্তি ভুমি ছিল তখনকার “বেঙ্গল” বা অবিভক্ত বাংলা এবং এই অবিভক্ত বাংলাদেশই এই আন্দোলনে সর্বাপেক্ষা অধিক জরদার ছিল। মৌলভী শামস আহমেদ সাহেব এই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহন করেন এবং ১৯২০ সালে তাহাকে গ্রেফতার করিয়া আলিপুর জেলে অন্তরিন করা হয়। মৌলভী শামসউদ্দিন আহমেদ ও তাহার ভ্রাতা মওলানা আফসার উদ্দিন আহমদ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে নদীয়া জেলার জমিদারগন বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়া নানা প্রকার ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলে।নীলকরদের বিরুদ্ধে বিরোধীতা, খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জমিদারী ও নিল কুঠিয়াল সমভাবে অসহযোগ আন্দোলনই এই গ্রেফতার এবং কারাবরনের মূল কারন। খেলাফত আন্দোলনের বাংলার প্রথম তিনজন মুসলমান যোগদান করেন তাহাদের মধ্যে

১।মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ

২।তাহার অগ্রজ মওলানা আফসার উদ্দিন আহমদ

৩।বর্ধমানের মৌলভী মাহাম্মদ ইয়াসিন(বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজীবি মরহুম আজম সাহেবের পিতা)

অত্র অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্যে দিয়েই প্রকৃতপক্ষে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয়।এই সময়ে তিনি কংগ্রেসের একজন কর্মী রূপে কয়েকবার ইংরেজ সরকার কতৃক ধৃত  হয়ে কারাবরন করেন। খেলাফত আন্দোলনে বাংলার অগ্রণী হিসাবে মওলানা মহম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী যাহাদের ভারতের আলী ভ্রাতৃদ্বয়” (Ali Brothers of lndia-আলী ব্রাদার্স অফ ইন্ডিয়া) মৌলভী  শামছউদ্দিন আহমদ ও মওলানা আফসার উদ্দিন আহমদ ভ্রাতৃদ্বয় কে “বাংলার আহমদ ভ্রাতৃদ্বয়” (Ahmad Brothers of Bangal আহমদ ব্রাদার্স অফ বেঙ্গল) বলিয়া অভিহিত করিতেন।।

১৯২২ সালে আলীপুর জেল হতে মুক্তিলাভ করিবার পর জনাব শামছউদ্দিন আহমদ সাহেব বংগীয় কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময়ে হাজী শরিয়তুল্লা সাহেবের নাতি পীর বাদশা মিঞার মামাতো ভগ্নি ঢাকার জিন্দাবাহার চৌধুরী বাড়ীর চৌধুরী গোলাম মুহাম্মদ সাহেবেরর প্রথমা কন্যা মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে তিনি পরিনয় সূত্রে আবদ্ধ হন। |

আরও পড়ুন : একজন যোগ্য অফিসার কাজী ওয়াজেদ

১৯২৭ সালে মৌলভী শামছউদ্দিন আহমদ সাহেব বংগীয় আইন পরিষদে কংগ্রেস প্রর্থীরূপে-এ নির্বাচিত হন।

১৯২৮ সালে জমশেদ পুর টাটা কোম্পানী সেকালে তৃতীয় বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শ্রমিক ধর্মঘট নিষ্পত্তির জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে জমশেদপুর গমন করেন এবং তিনমাস অবস্থানের পর তাঁরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায় করে সাফল্যের সাথে ধর্মঘট নিষ্পত্তি করেন। এই কৃতিত্বের ফল শ্রুতি সরূপ তিনি জমশেদপুর টাটা শ্রমিক সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯২৯ সালে তিনি মুসলিম ন্যাসনালিষ্ট পার্টী সংগঠন করেন। মওলানা আবুল কালাম আজাদ সভাপতি এবং মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯২৯ সালে ডিসেম্বর মাসে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন ভারতের পূর্ণ স্বাধিনতা দাবী করে প্রস্তাব গৃহিত হওয়ার পর তিনি আবার স্বাধিনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহন করেন। বিদেশী কাপড় বর্জন করিয়া খদ্দর পরিধান আরম্ভ করেন এবং আমৃত্যু তিনি খদ্দরের কাপড় পরিধান করতেন।

১৯৩০ সালে মার্চ মাসে তিনি আইন অমান্য আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে আইন সভার সদস্য পদ হইতে পদত্যাগ করেন।।

১৯৩৩ সালে এপ্রিল মাসে তিনি কলিকাতা করপােরেশনের সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই সালে তিনি কলিকাতা করপােরেশনের রাস্তা ও বস্তি কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই সময়ে জনাব শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক সাহেব কলিকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। |

১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস বাংলার হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের জন ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্ট প্রনয়ন করেন। তাঁর সক্রীয় ভাবে অংশ গ্রহণ করিয়াছিলেন তিনি, কিন্তু ১৯২৯ সালে কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস সম্মেলনে দেশবন্ধুর এই “বেঙ্গল প্যাক্ট” রহিত হয়ে যায়। সুভাষচন্দ্র বসু উক্ত সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। প্রকাশ্য সভায় বেঙ্গল প্যাক্ট” পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের সহিত সংশ্লিষ্ট মুসলমান সদস্য গন বিশেষভাবে মর্মাহত হয়ে কংগ্রেস বর্জন করেন এবং মওলানা আকরাম খাঁন সাহেবের নেতৃত্বে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি” গঠন করেন ১৯২৯ সালে এবং মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেব এই সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯২২ সাল হইতে ১৯৩৪ পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ ১২ বসর সময়ের মধ্য কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির মাধ্যমে কৃষক সম্প্রদানের স্বার্থরক্ষায় সফলতা অর্জিত না হওয়ায় ১৯৩৬ সালে শেরে বাংলা জনাব একে, ফজলুল হক সাহেবকে সভাপতি, মওলানা আফসার উদ্দিন আহমদ, জনাব তমিজ উদ্দিন আহমদ খাঁন ও সৈয়দ নওশের আলী সাহেবকে সহ-সভাপতি ও সর্বজনাব হুমায়ন কবির, জনাব আবুল মনছুর আহমদ, জনাব জালাল উদ্দিন হাশেমী, মওলানা আহমদ আলী, জনাব মজিবর রহমান ফুলপুরি, জনাব আব্দুল মালেক এবং জনাব মোখলেসুর রহমান প্রমুখকে সদস্য করে এবং মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেবকে সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে “নিখিল বঙ্গকৃষক প্রজা সমিতি ” গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন : একজন যোগ্য অফিসার কাজী ওয়াজেদ

প্রকৃত পক্ষে ১৯৩৬ সালে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি” এর নাম পরিবর্তন করিয়া “নিখিল বঙ্গ কৃষক প্রজা সমিতি নাম করা হয় এরং মৌলভী শামছউদ্দিন আহমদ এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে তিনি ঢাকায় ঐতিহাসিক কৃষক প্রজা সম্মেলন সংগঠন করেন।

১৯৩৫ সালে সংশোধিত ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৩৬-১৯৩৭ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে ৪২ টি আসনে জয়লাভ করেন। আইন সভায় তাহার কৃষক প্রজা দলের প্রথম কর্মসূচি ছিল বিনা ক্ষতিপূরণে জামিদারী প্রথার বিলােপকরা।

বাংলার অগনিত দারিদ্র ও নির্যতিত কৃষক প্রজা সাধারণ কল্যান ও উন্নতি কল্পে মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেবের অক্লান্ত কর্মপ্রচেষ্টা এদেশের ইতিহাসে উল্লেখ্যযােগ্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। পরবর্তী কালে এ, কে, ফজলুল হক সাহেবের প্রধান মন্ত্রীত্ব কালে এবং পরবর্তিতে বাংলার কৃষক ও প্রজা সাধারনের উন্নতি কল্পে যে সকল আইন পাশ হয়েছিল তার মূলে শামসউদ্দিন আহমদ সাহেবের অবদান ও কর্ম প্রচেষ্টা বিশেষ ভাবে কার্যকারী ছিল।।

তিনি তদানীন্তন বাংলার বিভিন্ন জনসভায় নির্যাতিত ও অশিক্ষিত প্রজার অভাব অভিযােগের কথা অগ্নিগর্ভ ভাষায় ব্যক্ত করে এক সময়ের বিশেষ সম্মান ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

১৯৩৭ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহাতে মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেব কৃষক প্রজা পার্টির প্রার্থিরূপে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৩৭ সালে মার্চ মাসে তিনি উদ্যোগী হইয়া কৃষক প্রজা ও মুসলীম লীগ সদস্যদের মধ্যে কোয়ালিশন গঠনে সক্ষম হন। মন্ত্রীসভায় মুসলিমলীগের ৩জন এবং কৃষক প্রজা হিন্দুদের মধ্যে হইতে ৩ জন মন্ত্রী গ্রহন ছিল উক্ত কোয়ালিশনের অন্যতম শর্ত।।

কিন্তু কোয়লিশনের শর্ত ভঙ্গ করায়, কৃষক প্রজা দল, মৌলভী এ,কে, ফজলুল হকের নেতৃত্বে চালিত কোয়ালিশন বর্জন করেন, অতঃপর দলের অর্ধেক সংখ্যক সদস্য কোয়ালিশন হইতে পৃথক হইয়া মৌলভী এ, কে, ফজলুল হকের স্থলে মৌলভী শামছউদ্দিন আহমদকে দলের নেতা নির্বাচিত করেন। অতঃপর ১৯৩৮ সালে প্রধান মন্ত্রী হিসাবে মৌলভী এ, কে ফজলুল হক এবং কৃষক প্রজা পার্টির নেতা হিসাবে মৌলভী শামছ উদ্দিন আহমদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়।

১। সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিনা খেসারতে জমিদারী উচ্ছেদের বিল সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। এবং

২। কৃষি মন্ত্রীর দপ্তর তাঁর দলকে দিতে হবে।

১৯৩৮ সালে মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সর্ব প্রথম অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং কৃষি  পশুপালন দফতরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু মৌলভী এ, কে, ফজলুল হক চুক্তির শত পালন না করায় ১৯৩৯ সালে মার্চ মাসে মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের মধ্যে তথা সারা ভারতবর্ষের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মন্ত্রীসভা হইতে নীতির প্রশ্নে পদত্যাগ করেন।

ইংরেজ সরকার ও জমিদারদের প্রবল বিরোধিতা ফলে ঐ বিল উত্থাপন করা সম্ভব না হওয়ায় মন্ত্রীসভা হইতে পদত্যাগ করেন।

পরবর্তী সময়ে ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হিন্দু মহাসভা ও কৃষক প্রজা কোয়ালিশন যাহা   “সামা-হক মন্ত্রীসভা” নামে পরিচিত তাহাকে “যোগাযোগ ও গণপূর্ত” দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পন করা হয়। সেই সময় দুর প্রাচ্যের সর্বাধিনায়ক ও ভারতের বড়লাট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন লর্ড ওয়েভেল। তখন জাপানীরা। আসাম পর্যন্ত পৌছে গেছে এবং কলিকাতা ও চট্টগ্রামে বোমা বর্ষণ আরম্ভ করেছে। যুদ্ধ কালীন প্রয়োজনে বহু রাস্তা ও বিমান বন্দর তৈরি করা হচ্ছিল ঐ সময়ে কোটী কোটী টাকা ব্যয় হয়। এই ব্যয়বহুল প্রকল্পের দায়িত্ব ছিল বাংলা সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উপর। লর্ড ওয়েভেল ‘স্বয়ং কলিকাতা এসে জনাব শামসউদ্দিন আহমদ সাহেবকে যুদ্ধ কালীন ব্যয়ের দায়িত্ব অর্পন করেন এবং তিনি দুই বৎসরকাল গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৬ সালে শামসউদ্দিন আহম্মেদ সাহেব মুসলিম লীগে যোগদান করেন। পাকিস্তান ইসুতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহাতে তিনি মুসলিম লিগের প্রার্থী রূপে আইন পরিষদের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন এবং সােহ্রাওয়াদী মন্ত্রীসভার সদস্য রূপে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পূর্ণ শিল্প বাণিজ্য ও শ্রম দপ্তরে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং দক্ষতার সহিত এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৬ সালে কলিকাতা ট্রামওয়ে কর্মচারীদের ধর্মঘট চলা কালে ট্রামওয়ে কর্তৃপক্ষ শ্রমমন্ত্রী হিসাবে তাঁদের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেন কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী মেনে নিতে ট্রামওয়ে কর্তৃপক্ষকে তিনিবাধ্যকরেন।

১৯৪৭ সালে ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পর তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার সহিত ঢাকায় আসেন, তাঁর আজীবন জমীদারী বিরােধী আন্দোলনের কারনে, বিভিন্ন নেতার প্রবল বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নাজিম উদ্দিন মন্তীসভা হইতে তাহাকে বাদ দেওয়া হয়।

১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী জনাব লিয়াকত আলী খান তাহাকে বার্মার রাষ্ট্র দূত নিযুক্ত করেন। রাষ্ট্র দুতের দায়িত্ব গ্রহনের জন্য তদানিন্তন পাকিস্তানের রাজধানী করাচী গমন করেন। করাচীতে আবস্থান কালে জনাব। লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন এবং খাজা নাজিমউদ্দিন প্রধান মন্ত্রী হন। খাজা নাজিমউদ্দিন। সাহেব তাহাকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য পদ হইতে পদ ত্যাগ করিতে বলেন। ইতি পূর্বে যেহেতু পরিশধের সদস্য পদ বজায় রেখে ডাঃ আবদুল মল্লিব মালিক সাহেবকে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্র দূত নিযুক্ত করা হইয়াছিল, সেইহেতু মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ সাহেব পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরনের প্রতিবাদে বার্মার রাষ্ট্র দূতের পদে ইস্তফা দেন।

আরও পড়ুন : একজন যোগ্য অফিসার কাজী ওয়াজেদ

১৯৫৬ সালে তিনি সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে তার চিন্তাভাবনা আজকে রাশিয়ার কমুনিষ্ট পাটি পরিবর্তীত ধ্যানধারনার অন্তর সুরী অর্থাৎ ধর্মীয় মূল্য বোধ ও সমাজতন্ত। তিনি আজ থেকে ৩৫ বৎসর পূর্বে সমাজতন্ত্রের যে রূপরেখা দিয়ে গেছেন তাহা আজকের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সমাজতন্ত্রের অনুরূপ। বাংলাদেশেও তার দেওয়া রূপরেখার মাধ্যমে দেশের সমস্যা সমাধান দেওয়া সম্ভব।

১৯৬৬ সালে তাহাকে পূর্ব পাকিস্তানের ইলেকশন ট্রাইবুলের সদস্য পদ দেওয়া হয়। ২ বৎসর তিনি উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মৌলভী শামসউদ্দিন সাহেব শুধু একজন নাভক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন তাহা নয়, তিনি একজন আদর্শ সমাজসেবী এবং বিদ্যুৎ শাহী ব্যক্তি ছিলন। তাহারই প্রচেষ্টায় ১৯৪৬ কুষ্টিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। এবং তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কষ্টিয়ার কুয়াতুল ইসলাম মাদ্রাসা ও তিনি তাহার পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাহাতাবীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে মাহাতাব উদ্দিন হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেন। অবিভক্ত বাংলার নানা স্থানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাহায্য কারী সহযোগী ছিলেন। বিশেষভাবে উলেখ্য যে কোন প্রতিষ্ঠানে নিজ নাম ব্যবহার করেন নাই ও করিতে দেন নাই।

মৌলভী শামসউদ্দিন সাহেব সাহিত্যও ভালবাসিতেন। যুগের নাকিব” গ্রন্থের লেখক জনাব দেওয়ান আবদুল। হামীদ কতৃক প্রতিষ্ঠিত কান্ডারী” সাহিত্য মজলিশের বিশেষ বিশেষ সাহিত্য সভায় তিনি আগ্রহের সহিত। যােগদান করিতেন ইহাতে তাহার মধ্যে ১টি সাহিত্য সেবী মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। আজাদীপূর্ব বাংলার বঙ্গিও কৃষক প্রজা সমিতির মুখপাত্র সাপ্তাহীক কৃষক” পত্রিকার তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যাহার সম্পাদক ছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। ঐ পত্রিকাটি পরবর্তীতে দৈনিক পত্রিকা হিসাবে আত্নপ্রকাশ করে। উক্ত পত্রিকায়। তার কিছু লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।

মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ কৃষক-প্রজাদের ন্যায্য দাবী অর্থকরী ফসল পাটের সর্ব নিম্ন মূল্য নির্ধারণ করিবার জন্য সর্ব প্রথম প্রচেষ্টা নেন। টেকনাফ থেকে তেতুলীয়া পর্যন্ত যে মহাসড়কের পরিকল্পনার অংশ, ঢাকা আরিচা রোড চট্টগ্রাম হইতে টেকনাফ সড়ক নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অদ্যকার কাপ্তাই প্রজেক্ট সবই তাহার মন্ত্রী থাকাকালীন পরিকল্পনা জাতির কিংবা দেশের উন্নতির মেরুদন্ড হলে অর্থনীতি ও শিল্প, এই উপলদ্ধিতে তদানিন্তন বাংলার প্রথম মুসলমান যিনি ফেডারেশন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া লিঃ নামে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কটন মিল লিঃ স্থাপন করেন।

ভারত সরকার ভারতবষ স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতা ও কর্মীদের যে তালিকা প্রনােয়ন করেন এবং সেই তালিকা। শামসউদ্দিন আহমদকে সংগ্রামী নেতা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করিয়া বৃত্তি ঘোষনা করেন।

আজাদী সংগ্রামের এই একনিষ্ঠ বীর সেনানী বাংলার দুঃস্থ কৃষক প্রজার একান্ত আপনজন মৌলভী। শামসউদ্দিন আহমদ ১৯৬৯ সালের ৩১শে অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রামে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তার মরদেহ কুষ্টিয়া জেলার সুলতানপুর গ্রাম সন্নিহিত বানিয়াপাড়া তাঁর পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা। হয়।

মৃত্যকালে মরহুম মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ স্ত্রী, পাঁচপত্র চার কন্যা ও বহু নাতি-নাতনী, গুনগ্রাহী এবং আত্নীয় স্বজন রেখে গেছেন।

তার তিরোধানে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মরহুম নুরুল আমিন সাহেব বলেছিলেন “আমি জনাব শামসউদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে মর্মাহিত হয়েছি। তিনি উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন যোদ্ধা ছিলেন এবং বহু বার কারাবরণ করেছিলেন”।

আরও পড়ুন : একজন যোগ্য অফিসার কাজী ওয়াজেদ

শৈশবে ও যৌবনে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত তার জন্মস্থান যে গ্রামে অবসর মূহুর্তে তিনি পদচারণ করিতেন সেই সবুজ শ্যামলিমা মন্ডিত গ্রামের অনেকাংশই আজ পদ্ম গর্ভে বিলীন হইয়া গেলেও স্রোতস্বর্তী পদ্মা বীজগতিতে তার গন্তব্য স্থান অভিমুখে আজও প্রবাহিত কিন্তু মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। যে পদ্মানদীর তীরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন আজ থেকে একশত বৎসর পূর্বে সেই পদ্মাতীরেই নিজ জন্মস্থানে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত।

১৯৮৯ সালে তার জন্ম শতবার্ষিকী উত্যাপন কালে আমরা এই মহান ও নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্বের গৌরবময় ও কর্ম মূখর জীবনের স্মৃতি চারণ করিয়া তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

আমরা মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁকে যেন শান্তি দিন এবং তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।

 

 

আরও পড়ুন : একজন যোগ্য অফিসার কাজী ওয়াজেদ

আরও খবর পড়ুন

Check out other tags:

পাঠকের পছন্দ

x