মোঃ রবিন : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। এই রায়কে ‘বিচার বিভাগের সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলীয় নেতারা। সেই ধারাবাহিকতায় এখন বিএনপি নেতারা তাকিয়ে আছেন তাদের নেতা হুমায়ুন কবিরের রিভিউ মামলার রায়ের দিকে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কুষ্টিয়া জেলা শাখার উপদেষ্টা ও কুমারখালী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির বিগত ১৬ বছর ধরে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ
বিএনপি দাবি করেছে, এই মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সময় হুমায়ুন কবিরকে প্রতিহিংসামূলকভাবে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। সেই সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে যেভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে দাবি করেছে দলটি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কুষ্টিয়া জেলা শাখার উপদেষ্টা ও কুমারখালী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির বিগত ১৬ বছর ধরে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন।
দলীয় নেতাদের দাবি: দ্রুত মুক্তি দিন হুমায়ুন কবিরকে :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ আব্দুস সালাম পিন্টু , ( বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কুষ্টিয়া জেলা শাখার উপদেষ্টা ও কুমারখালী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কারা নির্যাতিত নেতা হুমায়ুন কবিরের মুক্তির জোর দাবি জানিয়েছেন।)
তিনি বলেন, “আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করছি বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির গত ১৬ বছর যাবৎ একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়ে একটি ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি কারাগারে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।”
এডভোকেট পিন্টু আরও বলেন, “হুমায়ুন কবির একজন সৎ, সাহসী ও দলনিষ্ঠ সংগঠক। কারাবন্দি অবস্থায়ও তিনি অসহায় বন্দিদ এবং রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের পাশে থেকে তাদের সাহস ও মনোবল জুগিয়েছেন। আজ সেই মানবিক নেতাই কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বিভিন্ন মামলা সহ যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল বিভাগের ঐতিহাসিক রায়ে জামাত নেতা আজহারুল ইসলামসহ অনেক জাতীয় নেতার মুক্তির মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। হুমায়ুন কবিরের মুক্তির মধ্য দিয়েও আরও একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব।”
অবশেষে তিনি বিনীতভাবে অনতিবিলম্বে হুমায়ুন কবিরের মুক্তির আদেশ দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন : “ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে যেভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। হুমায়ুন কবিরের মামলাটিও তেমনই একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। ১৬ বছর ধরে একজন নিরপরাধ নেতাকে কারাগারে রেখে তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, আজহারুল ইসলামের মামলায় যেভাবে বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে, তেমনি হুমায়ুন কবিরের ক্ষেত্রেও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত। তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি বলেন : “এটিএম আজহারুল ইসলামের রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার সাহসী দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে, যদি সঠিকভাবে বিচার হয়, তবে সত্যের জয় হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা বলছি—হুমায়ুন কবিরও ন্যায়বিচারের অধিকার রাখেন। তিনি একজন সাহসী, ত্যাগী ও দলের প্রতি দায়বদ্ধ নেতা। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন নিষ্ঠাবান কর্মী খুব কমই দেখেছি।”
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহামুদ জুয়েল বলেন :“বিচার বিভাগের সাম্প্রতিক রায়গুলো আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে। আজহারুল ইসলামের মতো জটিল মামলায় যখন ন্যায়বিচার সম্ভব হয়েছে, তখন হুমায়ুন কবিরের মতো একজন রাজনৈতিক বন্দীর ক্ষেত্রেও ন্যায়বিচার আশা করা অমূলক নয়। আমরা আশাবাদী, তার মুক্তি অচিরেই নিশ্চিত হবে।”
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ইমরান হোসেন মিথুন বলেন : “আজহারুল ইসলামের মামলার মতো মামলায় যখন বিচার বিভাগ ন্যায়ের পথে হেঁটেছে, তখন হুমায়ুন কবিরের মুক্তিতে আর কী বাধা থাকতে পারে? আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই—আমাদের এই নেতা হুমায়ুন কবিরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।”
হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই মোঃ মানিক হোসেন বলেন : “ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে আমাকে ও আমার ভাইকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমার মামলাগুলো ইতোমধ্যে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় এসেছে। কিন্তু আমার ভাই এখনো জেলে বন্দি। তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র গার্জিয়ান ছিলেন। ১৬ বছর ধরে তার অনুপস্থিতিতে আমাদের পরিবারে ধ্বংস নেমে এসেছে। তাই আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি—আমার ভাইকে মুক্তি দিন।”
দলীয় সূত্র জানায়, হুমায়ুন কবির বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকায় তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে তার দ্রুত মুক্তি দাবি করেছেন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।
বিএনপি মনে করছে, আজহারুল ইসলামের মামলার মতো অন্যায্যভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত মামলাগুলোর সঠিক বিচার হলে, বহু রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি পেতে পারে। দলটি আশা করছে, বিচার বিভাগ ন্যায়বিচারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং হুমায়ুন কবিরের মুক্তির মধ্য দিয়ে আরেকটি সাহসী উদাহরণ স্থাপন করবে।