রুপগঞ্জের ব্রাহ্মণখালী এলাকার আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি কফিল উদ্দিন, যিনি সাধারণ মানুষের সামনে নিজেকে নিরীহ ও ভদ্র হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু তার চার সন্তান—ইকবাল, আফজল, ইয়াকুব ও ইয়াসিনের সঙ্গে মিলে তিনি এলাকায় অপরাধের এক অদৃশ্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। বাইরে থেকে তারা ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের মনে হলেও বাস্তবে তারা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূল হোতা।
কফিল উদ্দিন ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের গুণগান গাইলেও, ৫ আগস্টের পর নিজের রূপ পাল্টে বিএনপির ছত্রছায়ায় চলে গেছেন। তিনি এখন প্রকাশ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছেন, অথচ একইসঙ্গে তাদের গালমন্দ করতেও পিছপা হন না। স্থানীয়দের মতে, রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করাই তার মূল লক্ষ্য। কফিল উদ্দিনের ভাই ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা হওয়ায় তার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে চলেছেন কফিল ও তার পরিবার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলেও তাদের ক্ষমতা কমেনি, বরং সেই একই দাপটে তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন।
কফিল উদ্দিন লোক দেখানোর জন্য দখল করা জমিতে একটি চায়ের দোকান স্থাপন করেছেন। তবে সেই দোকানে তেমন কোনো কাস্টমার আসতে দেখা যায় না। এতে প্রশ্ন ওঠে, কফিল উদ্দিন ও তার পরিবার আসলেই কীভাবে তাদের জীবন চালাচ্ছেন? অনেকের মতে, এই দোকান শুধুমাত্র তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ ঢাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। রুপগঞ্জের ব্রাহ্মণখালী এলাকার কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন প্রায় ৫-৬ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে তারা বিশাল বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু এটি শুধু বসতবাড়ি নয়, এর আড়ালে চলে এক রমরমা মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ।
আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে দেখতে পান, ওই জমির এক পাশে বাংলাদেশের পুলিশের একটি সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি, কারণ কফিল উদ্দিন পরিবারের ক্ষমতা এতটাই প্রবল যে, পুলিশও তাদের সামনে নিষ্ক্রিয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একাধিকবার রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কিছুদিনের মধ্যেই কফিল ও তার ছেলেরা পুনরায় দখল নিয়ে নেন।
এলাকায় গড়ে ওঠা বসতবাড়ির আড়ালে চলে মাদক, জুয়া ও নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। তাদের দৌরাত্ম্য এতটাই যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পায় না।
আমাদের প্রতিবেদকের ক্যামেরা দেখে ছুটে আসেন বহু ভুক্তভোগী। তারা জানান, কফিল উদ্দিন ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা সহ একাধিক মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর কফিলের ভাই গা-ঢাকা দিলেও কফিল ও তার পরিবার প্রকাশ্যে তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই পরিবার এলাকায় আরও বড় ধরনের অপরাধ সংগঠিত করবে। তাই জরুরিভিত্তিতে কফিল উদ্দিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও সরকারের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
দেখার বিষয় প্রশাসন এবার কি পদক্ষেপ নেয়, নাকি কফিল পরিবার আরও নির্ভয়ে তাদের অপরাধ সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকবে?